আমরা হাই তুলি কেন? এই বিষয়ে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত কার্যকারণটি হচ্ছে মানুষের দেহে যখন অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয় তখন তা পুরণের লক্ষ্যে হাই ওঠে যেন ফুসফুসে অতিরিক্ত বায়ু প্রবেশের মাধ্যমে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ হয়। কিন্তু এই ধারনা ভুল যদি অতিরিক্ত অক্সিজেনের চাহিদা পূরনের জন্যই হাই তুলতে হতো তাহলে ভারী কাজকর্ম বা ব্যায়ামের সময় আমাদের হাই উঠত সবচেয়ে বেশী। আধুনিক গবেষনার তথ্য অনুযায়ী আমাদের হাই ওঠে মাথা ঠান্ডা করার জন্য!
আমরা যখন চাপের মধ্যে থাকি, বা প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে পরি বা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় থাকি তখন মস্তিষ্কের একেবারে ভিতরের দিকের অংশের তাপমাত্রা বেশ বেড়ে যায়। তাছাড়া এই তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে ঘুমচক্রেরও সম্পর্ক আছে। এই সময় আমাদের হাই ওঠে যার ফলে বাইরে থেকে মুখের মাধ্যমে সরাসরি ঠান্ডা বাতাস মুখগহ্বরে প্রবেশ করে এবং গালের রক্তনালীর রক্ত ঠান্ডা করে। আর মুখমন্ডলের রক্তনালীর সাথে মস্তিষ্কের যেহেতু খুব সংক্ষিপ্ত দুরত্বের সংযোগ তাই এই ঠান্ডা রক্ত অল্প সময়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে মস্তিষ্ক ঠান্ডা করে।
হাই একটি সংক্রামক বৈশিষ্ট্য। একজনের হাই উঠলে তার আশেপাশে অবস্থিত অন্যান্যদেরও হাই উঠে। এই কারণটি বিবর্তনঘটিত। মানুষ যখন আদিকালে এখনকার তুলনায় নানাবিধ বিপদের মধ্যে বাস করত তখন দলবদ্ধভাবে নিজের গোত্রগুলোকে পাহারা দিত বা আরো বেশী সতর্ক দৃষ্টিতে থাকতে হতো। এই কারণে মস্তিষ্কের কার্যকারীতা যথাযথ রাখার জন্য একজনের হাই উঠলে তা পুরো দলটির মধ্যে ছড়িয়ে গিয়ে পুরো দলের মাধ্যেই সতর্কাবস্থা জারি রাখত। গবেষণায় দেখা গেছে যার সাথে যার রক্তের সম্পর্ক প্রবল তাদের মধ্যে হাই অপেক্ষাকৃত বেশি সংক্রামিত হয়।
শুধু মানুষ নয় জগতের নানাবিধ পশুপাখির মধ্যে হাই ওঠার প্রবণতা আছে। হাই তোলার একটি চমৎকার বিকল্প বাংলা প্রতিশব্দ আছে। এটি হলো ‘জৃম্ভন’।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া