সমুদ্রবিষয়ক বিজ্ঞানীগণ লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের দুই প্রজাতির ডলফিন জিনগতভাবে অন্যান্য এলাকা যেমন ভারত এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ডলফিনের চেয়ে পৃথক। এই আবিষ্কার সাম্প্রতিক উদ্ঘাটিত নানাবিধ আলামতের পক্ষে প্রমাণস্বরূপ যেখানে ধারনা করা হয়, বঙ্গোপসাগরে এমন পরিবেশ পরিস্থিতি রয়েছে যা জীবকূলকে বিবর্তিত হয়ে নতুন প্রকরণ সৃষ্টির দিকে ধাবিত করছে। সম্প্রতি American Museum of Natural History(AMNH), WCS (Wildlife Conservation Society), এবং cE3c — Centre for Ecology, Evolution and Environmental Changes (Universidade de Lisboa) এর নতুন যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
একটি তুলনামূলক গবেষণায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় হাম্পব্যাক ডলফিন (Sousa chinensis) এবং বটলনোজ ডলফিন (Tursiops aduncus) এর ডিএনএ সংগ্রহ করা হয় এবং ডিএনএ তথ্যকে পুর্ববর্তী গবেষণার সাথে মিলিয়ে দেখা যায় যে এই দুটি প্রজাতির জিনবিন্যাস, ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য স্থানের ডলফিনের জিনবিন্যাস হতে ভিন্ন। এই আবিষ্কারের পথ ধরে নতুন আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় এই স্থানে ‘নদীর হাঙ্গর’ নামের নতুন একটি প্রজাতি উদ্ভুত হওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে।

উত্তর ভারত মহাসাগরে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা নদীর মাধ্যমে বিপুল পরিমান মিঠা পানি ও জৈব পদার্থ গ্রহণ করে। এই মোহনা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকেও অস্তিত্বশীল করেছে। অপেক্ষাকৃত গভীরতায় এতে রয়েছে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড নামক গভীর ডুকো গিরিখাত। এই সবকিছু মিলিয়ে এই অঞ্চলটি জৈবিকভাবে উর্বর সমুদ্র অঞ্চলে পরিণত হয়েছে, যার সাথে যুক্ত হয়েছে দুর্বোধ্য সামুদ্রিক স্রোত। এর ফলে এই সমুদ্রের নানাবিধ প্রজাতি অন্যান্য অংশের চেয়ে পৃথক হয়ে সল্প সীমার অঞ্চলের মধ্যে আবদ্ধ থাকে।
এই গবেষণাটি চালানোর সময় গবেষকগণ সমুদ্র তীরবর্তী, এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের হাম্পব্যক ডলফিনের ৩২ টি চামড়ার নমুনা সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে এগুলোর জিনবিন্যাস নির্ধারণ করা হয় এবং পূর্বে প্রকাশিত অন্যান্য প্রজাতির জিন বিন্যাসের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। গবেষকগণ তখন দেখতে পান, এই দুটি ডলফিনের জিনবিন্যাস অন্যান্য স্থানের ডলফিনের চেয়ে ভিন্ন যা বিশেষজ্ঞগণের কাছে অভুতপূর্ব এবং আরো গবেষণার দাবী রাখে বলে মনে হয়েছে।
WCS এর Ocean Giants Program এর পরিচালক হাওয়ার্ড রোসেনবওম বলেন, “জিনগতভাবে পৃথক ডলফিনের বংশের এই আবিষ্কার এরা কিভাবে সময়ের সাথে রূপান্তরিত হয়েছে তার জ্ঞান বৃদ্ধিতে আমাদের সাহায্য করবে। এই ফলাফল নতুন ধরনের সমাদ্রিক স্তন্যপায়ীর বিকাশ অনুসন্ধানে আমাদের সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে নানাবিধ প্রজাতির সংরক্ষণে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নিতে আরো যথাযথ ভুমিকা পালন করতে পারব।” [Science Daily অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক