অনেকের জন্যই “GMO” একটি ভীতিকর শব্দ। জিনগত পরিবর্তন সম্বলিত জীব বা জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম বহু বছর ধরে বিতর্কিত বিষয় হয়ে রয়েছে। এর একটি প্রধান সমালোচনা হচ্ছে এটা দিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়না। কিন্তু নতুন গবেষণা ফলাফল ভিন্ন কথা বলছে।
গবেষকগণ দেখেছেন উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় জড়িত তিনটি প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে উৎপাদনশীলতা ২০ শতাংশ বাড়ানো যায়। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ জীববিদ্যা এবং ফসল বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিফেন লং, পোষ্ট ডক্টরাল গবেষক কাতারজিনা গ্লোয়াকা এবং জনেস ক্রোমডিজিক এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। তাঁরা সালোকসংশ্লেষণের কার্যকরিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মাঠে তামাক গাছ ব্যবহার করে পরীক্ষা চালিয়েছেন, যা বিজ্ঞানীরা একসময় অসম্ভব মনে করতেন।
লং এবং তাঁর দল তামাক গাছ ব্যবহার করেছেন কারণ এদেরকে খুব সহজেই পরিবর্তিত করা যায়। আর গবেষকগণ একই কৌশল ব্যবহার করে অন্যান্য খাবার জাতীয় ফসলের মধ্যে পরিবর্তন আনা যাবে বলে আশাবাদী।
লং জানান, “প্রত্যেক ফসলের জন্য এটা কার্যকরি হবে বলে আমরা ধারণা করছি। যদিও বীজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি দেখার আগে আমরা নিশ্চিত হতে পারছিনা।”
মাঠের পরীক্ষাগুলোতে গাছপালা সূর্য থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে সে প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখা হয়েছিল। যদি ফসলের পাতা সরাসরি সূর্যের আলোতে উন্মুক্ত থাকে তবে তারা তাদের ব্যবহারের পরিমাণের চেয়ে অধিক সূর্যের আলো শোষণ করবে, যা মাঝে মাঝে পাতাকে সাদা করে থাকে। এই সমস্যা এড়ানোর জন্য গাছপালা অতিরিক্ত সব শক্তি তাপ হিসেবে মুক্ত করে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে নন ফটোক্যামিকেল কোয়েঞ্চিং (NPQ) বলা হয়।
কিন্তু একটি পাতা যখন ছায়ায় চলে আসে, উদাহরণস্বরূপ, কোন মেঘ কিংবা অন্য কোন গাছের, ঐ সময়ে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গতি কমে আসে, কখনো কখনো আধা ঘন্টা সময় নেয়। এই ছায়া সালোকসংশ্লেষণ এবং নন ফটোক্যামিকেল কোয়েঞ্চিং এর মাধ্যমে অতিরিক্ত আলো তাপ হিসেবে মুক্ত করার মাত্রা সীমিত করে দেয়।
লং এবং তাঁর দল এই ধীর গতির সময়ের মাত্রা পরিমাপ করেছেন। উদ্ভিদের ভিন্নতায় এই উৎপাদনশীলতা প্রায় ৩০ ভাগ পর্যন্ত হারিয়ে যাচ্ছে।
কৃষ্ণ নিয়োগী এবং লং দেখেন, তিনটি প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তামাক গাছের পুনরুদ্ধারের মাত্রাকে বৃদ্ধি করতে পারবে।
অপরিবর্তিত তামাক গাছের সাথে তুলনা করে দেখা যায়, দুটি পরিবর্তিত উদ্ভিদের সারির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২০ ভাগ এবং তৃতীয় সারিটির ১৪ ভাগ। মাঠের পরীক্ষাগুলো এর সত্যতাকে প্রমাণ করেছে।
এই গবেষণার ফলাফল হিসেবে যে কৃষি পণ্য পাওয়া যাবে সেটা আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষকদের জন্য সহজলভ্য করতে হবে এই শর্তের ভিত্তিতেই গবেষণাটিতে অর্থায়ন করেন বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার ভয়াবহ পূর্ভাবাসের বিপরীতে লং এর গবেষণাকে ভালো খবর হিসেবেই দেখা হচ্ছে। জাতিসংঘের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বিশ্বের সকল মানুষের মুখের আহার নিশ্চিত করতে ২০৫০ সালের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন ৭০ ভাগ বৃদ্ধি করতে হবে। আর সেটা বর্তমান চাষযোগ্য ভূমি ব্যবহার করেই।
ক্রমবর্ধমান ফসল উৎপাদনের আরেকটি উন্নয়নশীল পদ্ধতির নাম হচ্ছে উলম্ব চাষ, যা ঘরের ভেতর স্তূপকৃত উলম্ব কাঠামোর মধ্যে ফসল উৎপাদনের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কম পরিমাণ জমির প্রয়োজন হয়। কিন্তু লং এতে আশাবাদী নন।
লং বলেন, “এটা খুবই খরচ সাপেক্ষ এবং আপনি যখন প্রতি একর উৎপাদন বৃদ্ধি করবেন এর কাঠামো পার্শ্ববর্তী ভূমির উপর ছায়া ফেলবে। ফলে তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যাবে। উলম্ব চাষ শহরগুলোতে উচ্চমূল্যের ফসলের জন্য একটি আদর্শ পদ্ধতি কিন্তু অতিরিক্ত প্রয়োজনের খদ্যের জন্য কোন সমাধান হতে পারেনা।”
লং এর মতে, সালোকসংশ্লেষণ পরিবর্তন কৌশলের চাষ পদ্ধতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে অতিরিক্ত কোন জমির প্রয়োজন হয়না। তিনি বলেন, “আর এজন্যই আমরা এই কাজটি নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এবং চেষ্টা করে যাচ্ছি কোন প্রকার জমির ব্যবহার না বৃদ্ধি করে কিভাবে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো যায়।”
-শফিকুল ইসলাম