দৈবক্রমে আবিষ্কৃত হলো লিথিয়াম ব্যাটারীর চেয়ে ৪০০ গুণ দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারী

0
553
স্বর্ণের ন্যানোওয়্যারে তৈরী ব্যাটারীর প্রোটোটাইপ

ইলেকট্রনিক্স পণ্যের উপর আমরা কতটা নির্ভর হয়ে পড়েছি টের পাওয়া যায় এর ব্যবহারের একটু বিচ্যুতি ঘটলে। যেমন ধরুন আপনার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেল, হাসফাঁস কাকে বলে আপনি সেটা খুব ভাল জানেন।
পোর্টেবল যেকোনো ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য ব্যাটারী সমস্যা সাধারণ বিষয়। এই ব্যাটারীগুলোতে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় লিথিয়াম। লিথিয়ামের যৌগের চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি।

স্বর্ণের ন্যানোওয়্যারে তৈরী ব্যাটারীর প্রোটোটাইপ
সোনার ন্যানোওয়্যারে তৈরী ব্যাটারীর প্রোটোটাইপ

দৈবক্রমে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা আরেকটি মডেল বের করে ফেলেছেন যেটা লিথিয়াম ব্যাটারীর চেয়েও বেশি স্থায়ী। লিথিয়ামের ব্যাটারী হাজারখানেকবার চার্জ করার পর আর চার্জ জমিয়ে রাখতে পারে না। এ অবস্থাকে বলে লিথিয়ামের ক্ষয় হয়ে যাওয়া। তারা লিথিয়ামের পরিবর্তে ব্যবহার করেছেন সোনার ন্যানোওয়্যার। ম্যাংগানিজ অক্সাইডের প্রলেপের সাথে স্বর্ণের ন্যানোওয়্যারের কাঠামো ক্ষয় এমনভাবে রোধ করেছে যে এ ব্যাটারীর স্থায়িত্ব বেড়েছে প্রায় ৪০০ গুণ। ন্যানোওয়্যারগুলোর পুরুত্ব ১টা ব্যাকটেরিয়ার পুরুত্বের সমান। এই ব্যাটারীর মডেলকে ২ লক্ষবার রিচার্জ করা হয়েছে, তারপর এর কর্মদক্ষতা পরীক্ষা করে মাত্র ৫% কম পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বিপুলসংখ্যকবার এটিকে কার্যকারিতা অক্ষুন্ন রেখে চার্জ ও ডিসচার্জ করা যাবে।

কেন এমনটা হল সে কারণ অবশ্য উদঘাটিত হয় নি। প্রাথমিকভাবে গবেষকদের লক্ষ্য ছিল কঠিন দশার ব্যাটারী তৈরী, যা চার্জ সংরক্ষণ করতে তরলের পরিবর্তে তড়িৎ বিশ্লেষ্য জেল ব্যবহার করবে। ছবিতে দেখানো জেল এর চারপাশ ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইডের প্রলেপ দেয়া হয়েছে ন্যানোওয়্যারের ক্ষয়রোধ করতে। কঠিন দশার ব্যাটারী তৈরীর উদ্দেশ্য ছিল নিরাপদ ব্যাটারী তৈরী করা। লিথিয়ামের বিভিন্ন ব্যাটারী মূলত তরল তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করা হয় কোষের ভেতর, যা খুবই দাহ্য আর তাপমাত্রার সাথে সংবেদনশীল। তাই গবেষক দলটি চেষ্টা করছিল একটু ভারী তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করতে।

গবেষক দলটির নেতা রেগিনাল্ড পেনার বলেন, “আমরা যখন ডিভাইসগুলো রিচার্জ করার চক্র চালাচ্ছিলাম, আমরা হঠাৎ বুঝতে পারলাম এগুলো ক্ষয় হচ্ছে না। আমরা এখনো এর কারণ জানতে পারিনি।”

আমরা যে ডিভাইসগুলো ব্যবহার করি তার বেশিরভাগেই তরল তড়িৎ বিশ্লেষ্য ব্যবহার করার কারণ, এর পরিবাহিতা নমনীয় আর একে আংশিক চার্জিত ও ডিসচার্জ করা যায়। জেল এর ক্ষেত্রে উচ্চ পরিবাহিতা সম্পন্ন পদার্থ পাওয়া দুষ্কর। ন্যানোওয়্যার ব্যাকটেরিয়ার মত সরু হওয়ায় আর তড়িৎ বিশ্লেষ্য জেল দিয়ে প্রতিরোধক দেয়া বলে এর ক্ষয় হয় খুব কম। তার যত লম্বা হবে তত বেশি ক্ষেত্রফল পাওয়া যাবে, আর ক্ষেত্রফল বেশি হলে চার্জ ধারণক্ষমতাও বেশি হবে। অন্যান্য অনেক গবেষক একই বিষয়ের উপর গবেষণা করে যাচ্ছেন, কিন্তু সাফল্যের কাছাকাছি এসে গেছে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি আরভাইন এর এ দলটি।

এখন এই প্রোটোটাইপটি কিন্তু একটা ব্যাটারীর বাস্তবরূপ নয়। একটা ব্যাটারীর অ্যানোড দিয়ে সিস্টেমে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবেশ করে এবং ক্যাথোড দিয়ে আউটপুট দেয় সেই ইলেক্ট্রিসিটি। এই প্রোটোটাইপটিতে গবেষকরা দুটো ক্যাথোড সংযুক্ত করেছেন যাতে একটি আরেকটিকে রিচার্জ করে, এই চক্র তৈরী করায় বারবার রিচার্জ করার মাধ্যমে রিচার্জ সংখ্যা গোনা গেছে। এই পদ্ধতিটি ব্যাটারীটিকে পরীক্ষা করার জন্যেই শুধু।

দলটির নেতা পেনার বলেন, “এটি হচ্ছে দুটো কাপের একটিতে পানি নিয়ে একটি থেকে আরেকটিতে ক্রমাগত ঢেলে যাওয়া। অনবরত এই কাজ করতে করতে একসময় পানির পরিমাণ কমে যাবে। এই মডেলটির ক্ষেত্রে কল্পনা করে নিন যে ২,০০,০০০ বার এই বদল করার পর মাত্র ৫ শতাংশ পানি সিস্টেম লস হয়েছে।”

আরেকটি সমস্যা হল এতে সোনা ব্যবহার করা হয়েছে, এ ধরনের পণ্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রস্তুত করা সম্ভব না। তাই এর বিকল্প হিসেবে, সোনার পরিবর্তে নিকেল ধাতু ব্যবহার করা যেতে পারে। এ জন্য এই মডেলটির প্রযুক্তিবিদ্যা আয়ত্ত করারও প্রয়োজন। [Popsci ওয়েবসাইট অবলম্বনে]

  • শাহরিয়ার কবির পাভেল

মন্তব্য করুন