বিশ্বের সর্ববৃহৎ উলম্ব খামার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে নিউজার্সিতে। উলম্ব খামার এমন একটি স্থান যেখানে উলম্বকাঠামোর মাধ্যমে মাটি এবং সূর্য়ের আলো ছাড়াই ফসল রোপণ ও জন্মানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কৃষি খামার প্রতিষ্ঠান এরোফার্মস [AeroFarms] নিউআর্কে এর নতুন সদরদপ্তর স্থাপনের চিন্তাভাবনা করছে। একটি পুরাতন স্টিল মিলের ভেতর ৬,৫০০০ বর্গ মিটার জায়গা জুড়ে নতুন একটি সেট স্থাপন করা হয়েছে যা এরোফার্মসের বর্তমান ২,৮০০ বর্গ মিটার সাইটের থেকে মাত্র এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত। এটির কাজ সম্পন্ন হলে উলম্ব খামার হতে উল্লেখযোগ্য হারে তাজা শাকসব্জি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
একের পর এক ২৪ মিটার উঁচু তাক বসিয়ে যে পরিমাণ যায়গা তৈরী হচ্ছে তাতে কোম্পানীটি বছরে ৯ লক্ষ কেজি শাক সব্জি উৎপাদনের আশা করছেন।
এরোফার্মস যেভাবে তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তা আরও অসাধারণ। পুরোপুরিভাবে কিটনাশক মুক্ত এবং ছাদের তলায় সূর্যের আলোর পরিবর্তে স্বল্প শক্তির এলইডি লাইটের আলোয় স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার সিষ্টেমের মাধ্যমে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে সব্জির গুণাগুণ, রং, গন্ধ অটুট রেখে উৎপাদন বৃদ্ধির উপযোগী করা হচ্ছে। কোম্পানিটি বলছে এই পদ্ধতির মাধ্যমে একই পরিমান জায়গায় জমির ৭৫ গুণ বেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব।
এরোফার্মস এর বিপনন প্রধান এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ওশিমা বলেন, “খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃদ্ধি এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুর নাটকীয় পরিবর্তনের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও কীটনাশক সমস্যার জন্য উন্মুক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। আমাদের জন্য নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন এবং উলম্ব খামার চাষ পদ্ধতি এই পরিবর্তনশীলতার উপর বেশি করে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম করবে।”
এরোফার্মস এর শব্জি যেমন, পাতা কপি, সালাদ শব্জি(mizuna), আরুগুলা (রকেট) এবং কলমিদল শালুক প্রভৃতি আসলে মাটিতে রোপণ করা হয়না। এগুলো মূলত প্লাষ্টিককে পুনঃব্যবহার করে বারবার ব্যবহার করার মতো তৈরী কাপড়ের সীটে করে রোপণ করা হয় এবং মৃদু পানির ফোয়ারার ষ্প্রে থেকে শব্জিগুলো পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে। এই কৌশলের মাধ্যমে হাইড্রোফোনিক পদ্ধতি থেকে ৪৫ শতাংশ এবং মাঠ চাষ পদ্ধতি থেকে ৯৫ ভাগ কম পানি ব্যবহার হয়।

নিউআর্কের নতুন সুবিধা সমূহ এই খামারকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উলম্ব খামার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবে যা ২০১৫ তে উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এটা চলতি বছরের শেষের দিকে হতে যাচ্ছে। এই ফার্মের সদর দপ্তর যখন চালু হবে তখন এটা আর একা থাকবে না। পৃথিবীর সব জায়গায় এই পদ্ধতিটি ছড়িয়ে পরবে।
লন্ডনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টানেল যা এখন পরিত্যাক্ত সেখানে একটি উলম্ব খামার কম্পানি দোকান স্থাপন করেছে, যখন জার্মানিতে সুপারমার্কেটের ভেতরে ক্ষুদ্র উলম্ব খামারের চাষ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ইউরোপের অন্যত্র নেদারল্যান্ডে টেকসই গ্রাম উন্নয়নের মাধ্যমে উলম্ব চাষ পদ্ধতিতে শহরের অভ্যন্তরে নিজেদের প্রয়োজনীয় জৈব খাবারের জোগানের দিকে দৃষ্টিপাত করছেন।
এধরনের উদ্যোগের একটি সাধারণ উদ্যেশ্য হচ্ছে শহুরে স্বল্প জায়গাগুলিকে বারবার ব্যবহার করা এবং স্থানীয়ভাবে বসবাসকারী মানেুষের জন্য সতেজ শাকশব্জি উৎপাদন করা ও দৈনন্দিন খাবারে তা ব্যবহার করা। এর ফলে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীর মাঝে যে বিশাল দুরত্ব সেটাও কমিয়ে আনা। আর পরিবহনের জন্য যে জ্বালানী ব্যবহার হয় তা সংরক্ষণ ও পরিবেশের উপর চাপ কমানো।
পশাপাশি আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এই অভ্যন্তরীণ চাষের মাধ্যমে স্বল্প পানি ও জ্বালানীর ব্যবহার যা মানসম্মত কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী স্টিফেন জে. ভেনচার নিউইয়র্ক টাইমস কে বলেন, “শহরের মতো এমন ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা যেখানে জায়গা খুবই সীমাবদ্ধ, এরকম পরিস্থিতিতে কৃত্রিম আলোয় উৎপাদিত খাদ্য এবং এটি উলম্ব ভাবে সংরক্ষণ করে যা স্পাউট বা সালাদ শব্জির মতো উচ্চ পচনশীল জাতীয় পণ্যগুলোর একটি তাৎক্ষণিক স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার কথা স্বরণ করিয়ে দেয়।”
উলম্বখামার সম্পর্কিত তথ্য পাবেন নিচের ভিডিওটিতে।
-শফিকুল ইসলাম