কোরিয়ার একটি প্রাচীন কবল থেকে অদ্ভুত, লম্বা মাথার নারীর কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়েছে। এই নারী প্রাচীন শিল্লা সংস্কৃতির অংশ ছিলেন যা কোরিয়ান পেনিসুলায় প্রায় একসহস্রাব্দ শাসন করেছে।
এর আগেও বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা থেকে চোখা খুলি বিশিষ্ট কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে, তবে সেগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছিলো বলে গবেষকগণ প্রমাণ পেয়েছেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের আকৃতি ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করা হয় নি বা ইচ্ছাকৃত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রাচীন সংস্কৃতি: প্রাচীন শিল্লা সভ্যতা কোরিয়ান পেনিনসুলায় খ্রীষ্টপূর্ব ৫৭ সাল থেকে ৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছে যার ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদী শাসন-ব্যাবস্থাগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। আধুনিক কোরিয়ার সংস্কৃতির অনেক উপকরণই এই সভ্যতা থেকে এসেছে। তারপরও প্রাচীন এই সভ্যতার কবর এবং দেহাবশেষের নিদর্শন খুব বেশী পাওয়া যায় নি। দক্ষিন কোরিয়ার সৌল ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব-নৃবিজ্ঞানী দংহুন শিন এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কোরিয়ার মাটিতে কঙ্কালগুলো ভালোভাবে সংরক্ষিত হতে পারে নি।”
তবে ২০১৩ সালে গবেষকগণ সৌভাগ্যবশতঃ শিল্লা সম্র্রাজ্যের ঐতিহাসিক রাজধানী গিয়ংজুতে একটি কবর খুঁড়ে অসাধারণ নমুনা আবিষ্কার করেন। এখানে মকগোয়াকমিও নামে ঐতিহ্যবাহী একটি কফিনে একজন চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের নারীর প্রায় অবিকৃত হাঁড়গোড় উদ্ধার হয়েছে।
লম্বা মাথা: গবেষকদলটি সফলতার সাথে এই নারীর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ উদ্ধার করেছেন। মানুষের কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার আলাদা ডিএনএ আছে যা সরাসরি মায়ের কাছ থেকে আসে। এই ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এই নারী এমন একটি বংশ থেকে এসেছেন যা পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায় যদিও তা খুব গতানুগতিক নয়। কার্বনের আইসোটোপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এই নারী এখন সম্ভবতঃ একজন কঠোর নিরামিষাশী ছিলেন যা বৌদ্ধধর্মীয় অনুশাষন নির্দেশ করে যদিও সেই আমলে তা ঐ অঞ্চলে নিষিদ্ধ ছিলো। তাছাড়া তিনি তাঁর গৃহীত ক্যালরীর বড় অংশ শস্যজাতীয় শর্করা থেকে গ্রহণ করেছেন।

খুলির খন্ডাংশ থেকে গবেষকদল তাঁর মাথার ও মুখমন্ডলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যও পুনরূৎপাদন করতে সক্ষম হন। এই খুলির খন্ডাংশ জোড়া দেওয়ার পর তাঁর মাথার আকৃতি অপেক্ষাকৃত লম্বা পাওয়া যায় যা এই অঞ্চলের মানুষের বৈশিষ্ট্য হতে ভিন্ন। একটা সম্ভাবনা হতে পারে তাঁর খুলিটিকে ইচ্ছাকৃত ভাবে লম্বাটে করে তোলা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতাগুলো এই চর্চা বেশ স্বাভাবিক ছিলো এবং বিভিন্ন সভ্যতা থেকেই লম্বা মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে গবেষকগণ এই ধারনা উড়িয়ে দিচ্ছেন, কেননা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত খুলির সামনের দিকের অংশ অপেক্ষাকৃত চ্যাপ্টা থাকে। খুলি বিকৃতির অতিরিক্ত চাপ বহন করার জন্য খুলির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল অপেক্ষাকৃত অধিক বৃদ্ধি পায়।