বিজ্ঞানীরা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষূদ্র ব্যবহারযোগ্য এঞ্জিন তৈরি করেছেন। আলোয় চালিত এই ইঞ্জিনগুলো কোনো একদিন মানবকোষে ভ্রমনক্ষম আণুবীক্ষনিক রোবটের চালিক শক্তি হতে পারে।
প্রাযুক্তিক উদ্ভাবনে দিন দিন যন্ত্রপাতি ছোট থেকে ছোট হচ্ছে এবং সেই বিজ্ঞানীরা ক্রমশঃ এমন জটিল যন্ত্রপাতি তৈরির দিকে যাচ্ছেন যার আকার হবে কেবল জটিলাকার অণুর সমান- ন্যানোমিটার আকারের অর্থাৎ মিটারের বিলিয়নভাগ। তুলনা দেখানোর জন্য বলা যায় মানুষের একটি চুলের ব্যস ১০,০০০ ন্যানোমিটার।
ন্যানোবট (nanobot) অর্থাৎ ন্যানোমিটার আকারের রোবটগুলো এখনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পাতায় থেকে যাওয়ার কারণ হচ্ছে এই রোবটগুলোর চলাচলের কৌশল উদ্ভাবন বেশ চ্যালেঞ্জের। গবেষকগণ ন্যানোপ্রযুক্তির জন্য বেশকিছু শক্তির উৎস এবং প্রচালন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছেন তবে এতে উচ্চগতি, দৃঢ়তা প্রণয়ন এবং নিয়ন্ত্রন খুব ভালো ভাবে করা যায় নি।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোফোটনিক্স সেন্টারের ডাইরেক্টর এবং এই গবেষণার জেষ্ঠ্য গবেষক জেরেমি বমবার্গ এর মতে, “ইতিমধ্যে অনেক ছোট ছোট যন্ত্র তৈরি হয়েছে তবে এগুলো মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে ধীর; উদাহরণস্বরূপ একটি বাহু নাড়াতে কয়েক সেকেন্ড এমনটি মিনিট নিয়ে নেয় এবং তা করে দুর্বলভাবে। এই কারণে আমাদের হাতে এখনো ন্যানোবট নেই, যদিও সেগুলো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে খুব আলোচিত হয়।”
ন্যানোবট চালানোর জন্য তীব্র মাত্রার বলের প্রয়োজন কেননা ন্যানো পর্যায়ে প্রবাহী পদার্থের সান্দ্রতা (viscosity) নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। বমবার্গ বলেন, “ন্যানো পর্যায়ের একটি যন্ত্রের পানিতে ভেসে সাঁতার কাটাকে মানুষের ঝোলাগুড়ের মত ঘনবস্তুর উপরের সাঁতার কাটার সাথে তুলনা করা যায়। এটা তুলনামূলকভাবে খুবই থকথকে মাধ্যম তাই আপনাকে এর মধ্য দিয়ে যেতে হলে বিপুল বল দরকার।”
এই নতুন এঞ্জিনগুলো সোনার ক্ষুদাতিক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি হয়েছে যা ব্যসে ৬০ ন্যানোমিটার। এই কণাগুলো একটি আরেকটির সাথে পানিতে ভাসা তাপসংবেদনশীল যৌগের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।যখন এর উপর সবুজ আলো নিক্ষেপ করে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করা হয় তখন এটি পানিকে বিকর্ষণ করে মাইক্রো সেকেন্ডের মধ্যে সংকোচিত হয় এবং সোনার কণাগুলোকে জড়ো হয়ে যেতে বাধ্য করে। এই পুঞ্জীভুত কণিকাগুলোর ব্যস হয় তখন ৪০০ ন্যানোমিটার। এঞ্জিনটি ঠান্ডা করা হলে সংযোগকারী জেল পুনরায় পানি গ্রহণ করে সম্প্রসারিত হয় এবং সোনার কণাগুলো ছড়িয়ে যায়। গবেষকগণ এটিকে একটি স্প্রিংএর সাথে তুলনা করেন।

গবেষণার মূল লেখক এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোপার্টিকেল সেন্টারের গবেষক টাও ডিং বলেন, “এটা একটা বিস্ফোরণ। আমাদের শতশত সোনার বল আছে যেগুলো সেকেন্ডের মিলিয়নভাগের মধ্যে পানিতে ছড়িয়ে যেতে পারে যখন পলিমারের ছারপাশে পানি স্ফীত হয়।” গবেষকগণ বলেন যে বল এই নতুন এঞ্জিনসমূহ প্রযুক্ত করে তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। তুলনা হিসেবে বলা যায় এই বল যেকোনো মোটর বা পেশীর চেয়ে শতগুণ বেশী তীব্র।
“এগুলো অদ্যাবধি সবচেয়ে শক্তিশালী ন্যানো ইঞ্জিন।একই সাথে এই যন্ত্রগুলো কম শক্তি খরুচে, জীববান্ধব এবং কমউৎপাদন খরচ সম্পন্ন।“ বমবার্গ বলেন। এই নতুন যন্ত্রগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে actuating nanotransducers, বা ANTs। “সত্যিকারের পিঁপড়ার মতো তারা তাদের শরীরের অনুপাতে বিপুল বল উৎপন্ন করে।” বমবার্গ যোগ করেন।
গবেষকগণ এখন কিভাবে এই ANTs কে সত্যিকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায় তা অনুসন্ধান করছেন। বমবার্গ বলেন,”আমাদের সোনার প্রয়োজন নেই, রূপা ব্যবহার করেও আমরা সফল হয়েছি, তবে আমরা নিকেল বা তামা ব্যবহার করে এগুলো তৈরির চেষ্টা করব।”
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক